আবিদ হাসান নানাভাই, গফরগাঁও প্রতিনিধি : ফাহিমা সুলতানা ফউমি। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে জীবনের প্রথমবার কোন বইমেলায় এসে একা একা বই কিনেছে। ভীষণ উচ্ছ্বসিত সে! ছোট্ট এই শিক্ষার্থীর মতোই উচ্ছ্বসিত ছিল ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার প্রায় প্রতিটি বইপ্রেমী। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় আর ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে শেষ হয়েছে বক্ষ্মপূত্র পাড়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এক বইমেলা। মেলায় সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ছাড়ে বই কিনতে পেরে খুশিতে মাতোয়ারা হাজারও বইপ্রেমী। প্রতিবছরই যেন এমন বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় সে প্রত্যাশা করছেন সাহিত্যপ্রেমীরা।
শুক্রবার (৫ মার্চ) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের শাঁখচূড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমী এই বইমেলা। ”মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পড়বো বই, বাড়ি হবে পাঠাগার” স্লোগানে স্থানীয় মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন এই মেলার আয়োজন করে।
মেলায় এসেছিলেন স্থানীয় এক নার্সারি তত্বাবধায়ক হারুন সরকার।
বঙ্গবন্ধু কর্ণারে বঙ্গবন্ধুর উপর লেখা বিভিন্ন বই খুঁজছেন তিনি । হারুন জানান, প্রত্যন্ত গ্রামে এমন একটি বইমেলা দেখে আমি অভিভূত। এত সুন্দর সুন্দর বুকস্টল এবং বইপ্রেমীদের সে কি জোয়ার। সুপ্ত মনটাকে জাগ্রত করে দিতে পারলে এমনিই হয়।গ্রামীন বিনোদনের সব কিছুই ছিল।বই কেনায় ছিল বিরাট ছাড়। অনেক দিন পর এমন একটি মেলায় আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
এক স্টল থেকে অন্য স্টলে হন্য হয়ে পছন্দের বই খুঁজছেন ব্যবসায়ী রাকিব হাসান। তিনি জানান, সীমিত এ আয়োজনে ক্রেতা বেশি হওয়ায় দুপুরের আগেই ভালো মানের বই বিক্রি হয়ে গেছে। এমন সুন্দর আয়োজনে শরিক হতে পেরে ভালো লাগছে। এ বইমেলা প্রতি বৎসর ও তিনদিন ব্যাপি করার আহবান জানাচ্ছি।
ফউমি, হারুন ও রাকিবের মতো কয়েক হাজার বইপ্রেমি, ক্রেতা,বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় দিনভর মুখরিত ছিল ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে আয়োজিত দিনব্যাপী অন্য রকমের এই বইমেলা। মেলায় বঙ্গবন্ধু কর্নারসহ ১০টি বুক স্টল, ২টি দেশীয় পিঠার স্টল, মেডিকেল কাাম্প ও চিত্রশিল্পী জ. ই সুমনের আর্ট গ্যালারি অংশ নেয়। ছিল জব কর্নারও। শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ মূল্য ছাড়ে বই বিক্রির ব্যবস্থা করেন মেলার আয়োজকরা।
মুসলেহ্ উদ্দীন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাংবাদিক, সাহিত্যিক ফাইজুস সালেহীনের সভাপতিত্বে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাদল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায়, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আতাউর রহমান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পাগলা থানার ওসি রাশেদুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক ঢালী, মোস্তফা কামাল মনি, আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব, শামছুল আলম খোকন, তারিকুল ইসলাম রিয়েল, নজরুল ইসলাম তোতা সহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন ও পাঠাগারের প্রাক্তন সদস্যবৃন্দ। পরে এ উপলক্ষে আয়োজিত বই পড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মুসলেহ্ উদ্দীন ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক ব্যাংকার সাদেকুর রহমান জানান, তরুণ প্রজন্মকে পাঠ্য পুস্তকের বাইরে মননশীল বই পড়াকে অভ্যাসের অনুষঙ্গ করে তুলতে ও বইয়ের আলোকিত আনন্দভূবনের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতেই আমাদের এ উদ্যোগ। আমরা বইমেলা থেকে সাড়ে সাত হাজার বই নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য সফল ও স্বার্থক হয়েছে। এ সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে দিনব্যাপী বইমেলা আয়োজনের আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।