নারীর সংগ্রামী জীবন
এই শতকে এসেও চিন্তা
বাবা পায় না ভরসা,
যৌতুক লাগবে বিয়ে দিতে
যতই মেয়ে হোক ফর্সা।
ব্যবসায় করবে টাকা চাইবে
জামাইয়ের চরিত্র,
বাড়ি করে দিতে হবে
সাথে আসবাবপত্র।
রান্না-বান্না, ঝাড়-পোছ-লেপন
যেন কাজের মেয়ে,
শুশুর বাড়ির সবাই খুশী
এমন মেয়ে পেয়ে।
পান থেকে চুন খসলে গুঞ্জণ
বলবে কথা যা তা,
সব কাজ করেও মন মেলে না
এই তো জীবন খাতা।
বাবা এলে বাজার বন্ধ
এক সাঝ খেয়ে ভাগে,
মেয়ের বাবা তাই যত্ন নেই
রেগেও নাহি রাগে।
স্বামী মারে সুযোগ পেলে
কাঁদে মেয়ে নাকে,
সুখের হাসি হাসবে সেদিন
ভাগ্যে যদি থাকে।
বহু কষ্টে সংসার করে
টিকা-টিপ্পনী শুনে,
পায় না রক্ষা নারী হলেও
শ্রেষ্ঠা রূপে গুণে।
তবু নারী স্বপ্ন দেখে
হয়ত ফিরবে তার ক্ষণ,
পাথার সাঁতার কাটে একাই
এই তো নারীর জীবন।
নারীত্বে পুরুষ
নারী ছিলো বলেই পুরুষ
জানে কি যে মায়া,
নারী ছিলো বলেই পুরুষ
পায় যে শান্তির ছায়া।
পুরুষ ফেরে দ্রুত ঘরে
ঘরমুখী হয় জীবন,
ঘরণী ঘর স্বর্গ বানায়
সুখ-সূর্য দেয় কিরণ।
পুরুষ থাকে ছন্নছাড়া
যেমনে তেমনে চলে,
নারী এলে জীবন গাঙে
রাঙে ফুলে ফলে।
সঙ্গী সাথী থাকলেও শত
যেই একা একা সেই,
মনের ঘরে নারী ঢুকলে
ঘোচে মনের নেই নেই।
আটকে থাকা সুখের নদী
খুঁজে পায় সেই কল্লোল,
মরা মনে নারীর হাসি
মুহূর্তে দেয় হিল্লোল।
কাজ-চোরা পুরুষ কর্মী হয়
রোগী পায় আরোগ্য,
খোলে রুটি রুজির দুয়ার
খোলে আরো ভাগ্য।
বিয়ে কোনো নয়কো বোঝা
থেকো না আর ভয়ে,
নারীর চেষ্টাও কম থাকে না
হাসবে নিশ্চিত জয়ে।
নারীর ছোঁয়ায় পুরুষ হারে
বদলাও এ দৃষ্টিভঙ্গি,
তার মননও তোমার সম্পদ
সুখের দুখের সঙ্গী।
নারীর দিন
নারী তুমি সব চরিত্রে
আছো হয়ে ধন্যা,
কাজ করো, রোজগারও করো
এখন তুমি গণ্যা।
রান্না শেষে বাচ্চা সাজাও
দিয়ে আসো পাঠে,
তারপর স্বামীর সাথে কাজে
নেমে পড়ো মাঠে।
এখন তোমায় বকে না কেউ
বলে বলে কন্যা,
সংসারের হাল টানো তুমি
মুখে হাসির বন্যা।
গরু পালো, মৎস্য পালো
আরো লাগাও সবজি,
মাথা নতে এখন তুমি
করো না আর জ্ব্যি জ্ব্যি।
নারী নিপীড়ক
আমরা পুরুষ আমরা সভ্য
বড্ড যে পিপাসু,
ভীড়ের মাঝে নারী পেলে
হয়ে যাই যে পশু।
ঘরে আমি মিষ্টি ছেলে
শান্ত-শিষ্ট-ভদ্র,
বাইরে আমি টিজিং করি
কমগন্ধে হই উগ্র।
পরিকল্পিত ভীড় করে
প্রতিক্ষা যে প্রখর,
তারপর শিকারী এলে তো
বসিয়ে দিই নখর।
খেলবো খেলা জলকেলী
থাকবো হয়ে মাত্,
আসলে কেউ রক্ষা করতে
ভেঙে দেবো হাত।
বন্ধুরা সব পথের ধারে
করবো হৈ-হট্টগোল,
দেখে নারী, শিশু, বৃদ্ধা
ছাড়বো তো অশ্লীল বোল।
শিস দেবো ও লোলুপ চাইবো
দেবো চলায় বাঁধা,
উড়না ধরে দেবো টানটা
মরে যাবে আধা।
বাদ-প্রতিবাদ করতে এলে
কোমর দেবো ভেঙে,
ইঙ্গিতপূর্ণ চুমু দেবো
জীবন যাবে রেঙে।
করে সন্ধি অভিসন্ধি
করবোই যৌনানন্দ আশ্বাদ,
অক্ষম করতে খাঁচাবন্দি
বিফলে যাবে প্রতিবাদ।
নারীর রূপ
রূপে নারীর কদর বেশি
রূপেই ভাগ্য খোলে,
বিয়ে করে বড় লোকের
ঝুলে গেলো গলে।
রূপের গুণেই নারীর বিয়ে
অনেক ভালো ঘরে,
রূপের চেয়ে গুণের দরকার
বোঝে বিয়ের পরে।
রূপের রানী আরো সাজে
কাজ করে না তেমন,
বাড়ির মানুষকে শোনায় কথা
বাড়তে থাকে বেদন।
সাজবে শুধু সকাল বিকাল
কে শোনে আর কাকে,
বাড়ির মানুষ অল্পে অল্পে
ক্ষুব্ধ হতে থাকে।
লাগবে টাকা অনেক টাকা
স্বামী থাকে অস্থির,
শপিং করে লক্ষ টাকা
কুঁকড়ে যায় পুরুষ বীর।
একটু রাগ দেখালে আবার
খাবে না সারাদিন,
বকে বকে গালি দেবে
যেন ধরেছে জ্বীন।
বাবা মা ভাই আসবে ছুটে
খাবে বকা ছেলে,
ছেলে বোঝে তেলে জলে
নাহি কভু মেলে।
রূপ দেখে করতে নেই বিয়ে
হোক সে এলোকেশী,
গুণবতী কালো হলেও
সুখী হবে বেশী।
নারীর নারীত্ব
রূপ ছড়াতে শরম বিকায়
শরম বিকায় হেসে,
যুগের হাওয়ায় শরীর ভাসায়
চলে অশ্লীল বেশে।
মডেল সাজে গঠন দেখায়
মেলে দেয় নারীত্ব,
সৌন্দর্য যদি বিক্রি করে
থাকে কি আমিত্ব?
খুঁনসুটিতে মত্ত মাতাল
রূপ বেচে জীবিকা,
পুরুষ প্রতি পাঁচশ টাকা
হয় নিজে গণিকা।
মাটিতে আর পড়ে না পা
শরীরের বাড় বাড়ে,
স্রষ্টার ভয় ভুলে অকূলে
ফিরতে অক্ষম পাড়ে।
নিজেই নারী নিজেকে আজ
পণ্য করে ধন্য,
পাপের বোঝায় পিষ্ঠ তবু
হয় না একটু ক্ষুণ্ন।
বিড়ি টানে, গাজাও টানে
উড়না রাখে গলায়,
ছি কি উৎকট যাচ্ছে হয়ে
কথায় চলায় বলায়।
বন্ধুর সাথে অশ্লীল বেশে
হোটেলে রাত কাটায়,
মদ টানে, পার্টিও করে
রং রঙের বর্ণচ্ছায়।
কর্মের জন্য বাইরে যাচ্ছো
বলি তোমায় সাবাস,
তার মানে এই নয় যে করবে
বসের সাথে সহবাস।
নারীর প্রতি
কান্না তোমার নয়কো অস্ত্র
তোমার অস্ত্র কর্ম,
চোখের পানি মুছে ফেলো
করো গলদঘর্ম।
তোমায় অবজ্ঞা করবে কে?
করবে কেনো হে মান?
হেলার জবাব কেদে নয় বোন
হও আত্ম-বলীয়ান।
অবলা নও, বলতে শেখো
কাজ করে দাও জবাব,
সেজে-গুজে মনটা জয়ের
বাদ দাও তো এই স্বভাব।
তোমার কাজে তুমি রবে
সংসারের ধরবে হাল,
স্থান তোমার শক্ত হবে
ভয় পাবে দিতে গাল।
কীট-বিষ কেনো খাবে তুমি
হয়ে ধৈর্যচ্যুতি,
হেরে গিয়ে কেনো তুমি
দেবে আত্মাহুতি?
আত্ম-প্রতিষ্ঠিত হয়ে
তবেই করবে শাদী,
সব কিছু নেবে না মেনে
হবে প্রতিবাদী।
গায়ের রংটা সাদা বলে
গায়ের রংটা সাদা বলে
সবাই ভালোবাসে,
বাবা মায়ের মনটাও ভালো
মনে মনে হাসে।
গায়ের রংটা সাদা বলে
ঘুরে বেড়ায় ধিন তা,
বাবা মাও নিশ্চিন্তে আছে
নেই তো মনে চিন্তা।
গায়ের রংটা সাদা বলে
থাকে মনে দেমাগ,
অন্যায় কিছু করে ফেললেও
কেউ হয় নাকো বিরাগ।
গায়ের রংটা সাদা বলে
যেন সোনার খনি,
বন্ধু সমাজে আছে দাম
সবার মধ্যমণি।
গায়ের রংটা সাদা বলে
কেউ বকে না জোরে,
কাছে কাছে থাকে সবে
কেউ থাকে না সরে।
গায়ের রংটা সাদা বলে
আজব তার যে স্বভাব,
সবাই তারে বাসে ভালো
বন্ধুর নেই তো অভাব।
গায়ের রংটা সাদা বলে
প্রেমের প্রস্তাব আসে,
কত ছেলে ঘুরে মরে
তারি আশে পাশে।
গায়ের রংটা সাদা বলে
স্বপ্ন তারি নিয়ে,
শিক্ষা বা দীক্ষা না থাকলেও
বড় ঘরে বিয়ে।
গায়ের রংটা সাদা হলে
সম্মান হালি হালি,
সমাজ তাকে ধন্য করে
দিয়ে হাতে তালি।
গায়ের রংটা কালো হলে
দেখবে না কেউ চেয়ে,
যতই তোমার থাকুক মেধা
মরবে তো না খেয়ে।
নারীর অসুস্থ পোশাক
নারী নিজেই নিজেকে যে
করে নিচ্ছে পণ্য,
কুচিন্তার পুরুষ তাকে তো
করবেই ভোগ্য গণ্য।
শরীর দেখায়, শরম বিকায়
করে না ঠিক পর্দা,
টাইট শার্ট পরে, প্যান্ট পরে
সাজে মরদ-মর্দা।
নারী যদি হাফ প্যান্ট পরে
হারায় নারীত্ব সবটায়,
তোমার সৌন্দর্যের বাড়ে শ্রী
তোমার শালীনতায়।
গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়াও
দুই কাঁধ থাকে খোলা,
যে সে তখন তাদের দেখে
জল তো করবেই ঘোলা।
পাতলা শাইনি কামিজ পরো
পরো স্লিভলেস ব্লাউজ,
ব্রা পেন্টি দেখিয়ে বেড়াও
ফিরবে কবে কও বুঝ?
লেহেঙ্গা পরো, নাভি দেখাও
উড়না থাকে হাতে,
দেখবে পুরুষ ছুড়বে কথা
জিভ তো কাটবে দাঁতে।
ওয়েটলেস পোশাক পরে যে
নিজের ওয়েট কমাও,
অসুস্থ চিন্তা মন থেকে
করে ফেলো উধাও।
স্লিভওয়্যার পরো তুমি
সাজো যে বেবিডল,
তাতে তোমার ফোঁটে না রূপ
বাদ দাও বিদেশী ছল।
নারী সর্বশ্রী
নারীর হাসি অতি মিষ্টি
প্রতি ছেলে পাগল,
নারীর হাসি দেখেও বুড়ো
হারিয়ে ফেলে বোল।
তাক লেগে যায় প্রতি লোকের
নারীর লম্বা চুলে,
সেই না চুলে ঢেউ খেলে যায়
হাটলে হেলে দুলে।
নারীর কণ্ঠ মিষ্টি মধুর
শুনতে ভালো লাগে,
মধুর কণ্ঠের ঝংকার শুনে
সুপ্ত আবেগ জাগে।
নারীর চোখে থাকে ভাষা
থাকে আরো মায়া,
ঐ চোখে চেয়ে নিষ্পলক
হারায় না কে হায়া!
নারীর ওষ্ঠ্যে থাকলেও গরল
শুষে নেবে জ্ঞানী,
সকল বাণী ভুলে গিয়ে
লম্পট হবে ধ্যানী।
বলাকার ঠোঁট নাক যেন তার
কিরণ ফেলে চাঁদে,
নলক নড়ে ঝলক ছেড়ে
আবার নাকে কাঁদে।
কপালে তার বিন্দু ঘামে
নজর আটকে যাবে,
কপোলের তিল দিলটা চেরে
আভিজাত্য ভাবে।
নারীর না বোঝা অভিমান
সুখের যেন কারণ,
স্বর্গের অমৃত সর্বশ্রী
একই অঙ্গে ধারণ।
নারীর মেকআপ
নারী সাজতে বাসে ভালো
রূপচর্চা করে চাষ,
মুখ পরিষ্কার করবে বলে
কেনে তাই ফেসওয়াশ।
লুকে ন্যাচারাল ভাব আনতে
ব্যয় তো করে সেশন,
ত্বকের সাথে মিলিয়ে তাই
কেনে ফাউন্ডেশন।
মেকআপ হবে দীর্ঘস্থায়ী
শাইনিং হবে আবার,
তাই তো দোকান ঘুরে ঘুরে
কেনে যে ফেস পাউডার।
চোখের নিচে যে ডার্ক সার্কেল
রূপ সৌন্দর্যের কিলার,
এই ডার্ক সার্কেল ঢেকে দিতে
তাই কেনে কনসিলার।
চোখের মেকআপ থাকবে না বাদ
বললেও ম্যাডও ব্যাডও,
উজ্জ্বল লুকের জন্য তারা
কেনে যে আইশ্যাডো।
ব্র্যান্ড দেখবে ঘেটে ঘেটে
ওয়াটারপ্রুফ আবার,
নীল সবুজ বেগুনী থাকলেও
কিনবে কালো আইলাইনার।
কাজল কালো চোখে আরো
কাজল দেবে তারা,
চোখের পাপড়ি ঘন দেখাতে
দেবে যে মাশকারা।
ঠোঁট রাঙাবে লিপিস্টিকে
মুখে দেবে ব্লাশ-অন,
নখে দেবে নেইলপলিশ
রেঙে যাবে কাল-ক্ষণ।
আরো আছে ভাই মেকআপ ব্রাশ
বাড়িটাই যে পার্লার,
দিনান্তে সেই মেকআপ তুলতে
দরকার মেকআপ রিমুভার।