সোমবার, ৪ মাঘ, ১৪২৭, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১, রাত ১২:৫৪ মি:
লেখালেখিটা একসময় শখের বিষয় করতাম। পরে কেমন করে যেন শখটা আমার নেশা হয়ে গেছে। নেশাটা কোন এক সময় পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলাম। আর তখনই সেটা আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আমি কি সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পারি? লেখালেখির কারণে মামলা চলমান রয়েছে এখনো। গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ তারিখ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় আমি, আমার ছোট ভাই ও অফিস স্টাফ সহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৭ মাস কারা ভোগ করি। জামিনে বের হয়ে লেখালেখি আর করব বলে না সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারাভোগের সময় আমি বুঝতে পেরেছি কে আমার আপন কে আমার পর। আমি দেখেছি আমার জন্য কারা কেঁদেছে, কারা কোর্টের বারান্দায় সময়ের পর সময় অপেক্ষা করেছে।
কারাভোগ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। কারণ আমি জেলখানা থেকে যে শিক্ষাটা পেয়েছি, সে শিক্ষাকে অন্য কোথাও থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। আর আমি এটাও বিশ্বাস করি যে মহান রব্বুল আলামীন যেটা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। দীর্ঘদিন চেষ্টাও করেছি না লিখে থাকার। পরে কিছুদিন লিখলাম এবং লেখার পরে মুছে ফেলতাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার হাত, আমার ঐ কলম আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে! তাই আবারও টুকিটাকি লেখালেখি শুরু করলাম। জানিনা আমার লেখা ক’জন পড়ছে! আসলে আদৌ কেউ এই লেখা পড়ে উপকৃত হচ্ছে কিনা। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি শিখছি এবং লিখছি।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সমগ্র বিশ্বের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অচল হয়ে পড়েছে সামাজিক, শিল্প ব্যবস্থাপনা, হুমকির সম্মুখীন অর্থনৈতিক অবস্থা। মুল্যহীন মানব সৃষ্টির সকল আবিষ্কার। বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরপরেও করোনা নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি দেখে হতাশ বিশেষজ্ঞ দল। আসুন এই মহা দুর্যোগের সময় আমরা পারস্পারিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করি। শারীরিক ভাবে নয়, অর্থনৈতিক ভাবে অন্যের পাশে থাকি। মনে রাখবেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী অপরাধী নয়, অতএব তাদের নিয়ে উপহাস অথবা ভিন্ন চোখে দেখার কিছু নেই। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি থাকা উচিত।
ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। তাই আমরা একে অপরকে ক্ষমা করে দেই। এ সময় যদি কোনো শত্রুও যোগাযোগ করে তার সাথে খারাপ ব্যবহার অথবা না চেনার ভান করা ঠিক হবে না। প্রত্যেক স্বামী তার স্ত্রীকে বোঝা উচিত। একে অপরের প্রতি সহনশীলতা বাড়ানো দরকার। স্ত্রীদেরকেও উচিত তার স্বামীর আয় রোজগার এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতিরিক্ত খরচ, বিলাসিতা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার বলে মনে করি। মানসিক অশান্তি না দিয়ে তাদের পাশে থেকে ভালো পরামর্শ দেয়া দরকার।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অনলাইন নববার্তা-কে জানাতে ই-মেইল করুন- nobobarta@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
গত ১৯ জুন ২০২০, শুক্রবার জুমার নামাজের পরে প্রেসক্লাবের দিকে গেলাম। দু-এক টি চায়ের দোকান খোলা ছিল আর কয়েকটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিক্রেতা ছাড়া তেমন কোনো মানুষ জন দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করে মনটা যেন কেমন হয়ে গেল। তাই চিন্তা করলাম আজকে ঘুরতে বের হব। রিপন নামের এক বন্ধুকে ফোন করলাম, যে তোমার মোটর সাইকেলটা নিয়ে চলে আসো। ঠিক ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলো প্রেসক্লাব। শাহবাগ হয়ে রওনা হলাম ধানমন্ডির দিকে, ধানমন্ডি থেকে মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী, আবার সংসদ ভবনের সামনে এসে কিছু সময় দাঁড়ালাম। একটি ছবিও তুললাম, রসিক একটি ক্যাপশন দিয়ে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলাম।
রাস্তার মাঝে মাঝে কিছু লোকজন দেখলাম আসলে তারা ভিক্ষুক নয় অথচ সাহায্য প্রার্থনা করতেছেন। কারণ অভাব আর ক্ষুধার যন্ত্রণা মানুষের লজ্জাকে হার মানিয়ে দিয়েছে। যখন সংসদ ভবনের সামনে আসলাম, তখন সে রকম কোনো দৃশ্য চোখে পড়লো না মনে হচ্ছে মেলা! সংসদ ভবন থেকে হাতিরঝিলে আসলাম সেখানেও একই দৃশ্য মনে হচ্ছে, পৃথিবী ফিরে পেয়েছে তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য , ফিরে পেয়েছে তার চঞ্চলতা। যখন আমরা গুলশান শুটিং ক্লাবের কাছাকাছি একটা ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন একটা ফোন আসে তিনি আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই। যিনি আমাকে আমার প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময় ৫/১০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ফোনটা রিসিভ করলাম, তিনি বললেন কেমন আছো। উত্তর দিলাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পরে আবার বললেন মনে হচ্ছে তোমরা আনন্দে আছো, তোমাদের ছবিটা দেখে ফোন দিয়েছি। ফোনটা ব্যাক করো। আমি তাকে ফোন করলাম, যে মানুষটা আমার মত আরো দশটা ছেলেকে সাহায্য সহযোগিতা করত তার মোবাইলে টাকা নেই। ভাবতেই অবাক লাগে। তিনি আমাকে বললেন মজনু বিশ্বাস করবা কিনা জানিনা আমার বাহিরে বের হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। কিন্তু কি করবো জানিনা, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার রাস্তায় বের হলে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হতো। আর আজ আমি চিন্তা করি কাল কি খাব? এখন ৫০০ টাকা হলে দুইদিন চলে। সময়ের ব্যবধানে মানুষের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।
তাই প্রিয় বন্ধুরা আসুন আপনার আমরা আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ নেই। যারা অনেকেই লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারতেছেন না, যাদের আর্তনাদ কেউ শোনে না। তাদেরকে যতটুকু পারি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করলে সেটা তিনি ক্ষমা করবেন না। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব হক রয়েছে আমাদের প্রতি। যারা একটু ভালো অবস্থানে আছি অবশ্যই আমরা সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করবো। যখন সময় এসেছে সময়টাকে কাজে লাগান। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আমাদের কে বরকত বাড়িয়ে দিবেন।
একবার ভেবে দেখেছেন কি? আজ আমি বা আপনি বিদায় নিলে আমার অথবা আপনার পরিবারের কি হবে? একমাত্র মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পারেন আমাদেরকে রক্ষা করতে। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, আমরা এটা বিশ্বাস করি। কিন্তু মহান রব্বুল আলামীন যেন আমাদেরকে এভাবে যেন মৃত্যু না দেন সেই কামনা করি।