ডা. জয়প্রকাশ সরকার : পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সমাবেশের ব্যাপারে সরকার কিছু জানতো না। আবার স্থানীয় খবরটা এরকম যে, প্রশাসনের অনুমোদনক্রমেই কক্সবাজারের সমাবেশে প্রায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গাদের সমাবেশ ঘটে। যাদের অধিকাংশই সাদা পোশাকে সমাবেশস্থলে জড়ো হয়। সমাবেশের আয়োজনে ছিলো আরাকান রোহিঙ্গা পিস এন্ড হিমেনেটারিয়ান কমিটি।
সমাবেশের জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অনুমোদন প্রার্থনা করে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, সমবেত রোহিঙ্গাদের সকলেই ছিল পুরুষ। নারী রোহিঙ্গদের ছাড়াই ৫ লক্ষ পুরুষ রোহিঙ্গাদের সমাবেশ! রোহিঙ্গারা প্রায় প্রত্যেকেই মোবাইল ব্যবহার করে এবং তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম whatsApp।
সকাল ৯ টার মধ্যেই স্রোতের মত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে সমাবেশস্থলে হাজির হয়। তারা ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে।
এর মধ্যে মূল দফা হলো, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। নাগরিকত্ব না দিলে তারা ফিরে যেতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে জোরজবরদস্তি করা হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ! এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা কেউই ১৯৬২ সালের পরের কোন লিষ্টেই মায়ানমারের নাগরিক নয়। এরকম দাবী স্পষ্টত বাংলাদেশকে হুমকি দেয়ার নামান্তর। এই সমাবেশে বেশ কিছু সংগঠনের ব্যানার দেখা গেছে। এই সংগঠন গুলি থেকে রোহিঙ্গাদের ছাতিও সরবরাহ করা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, যে অসহায় বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছিলো আজ তারা আর অসহায় অবস্থায় নেই, তারা আজ নতুন উদ্যমে উৎজীবিত এবং সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ। রোহিঙ্গা নামক গোষ্ঠিকে আশ্রয় দেয়া এবং তৎপরবর্তী সময়ে যথাযথভাবে ম্যানেজ করতে না পারাটা আমাদের দেশের বড় ব্যর্থতা। বিভিন্ন এনজিও গুলোকে কোন নিয়মনীতি ছাড়াই দেদারছে ঢুকতে দেয়াটাও এসব সমস্যার জন্য ভয়ঙ্কর রকমের দায়ী। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা- অদ্যাবধি রোহিঙ্গাদের লিষ্ট তৈরী করতে না পারা।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অনলাইন নববার্তা-কে জানাতে ই-মেইল করুন- nobobarta@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
মায়ানমারকে মূলত কোন আন্তর্জাতিক চাপই পরাস্থ করতে পারবে না কারণ চীনের মতো পরাক্রমশালী একটি রাষ্ট্রের সমর্থন থাকলে তার আর কারো প্রয়োজন নেই আর মায়ানমারের আন্তর্জাতিক বানিজ্যও সীমিত। সুতরাং চাপ তৈরীর রাজনৈতিক বুলি না কপচিয়ে বাস্তবতা চিন্তা করা লাগবে। আমাদের জন্মভূমির অখন্ডতা রক্ষার্থে রোহিঙ্গাদের শক্ত হস্তে আমাদের নিয়মেই কন্ট্রোল করা প্রয়োজন। আর ওরা কখনই ফিরে যেতে না চাইলেও অবাক হওয়ার তেমন কোন কারণ দেখি না। আমার মতে, এটা আমাদের জানাই ছিলো, এ কথাটা আমি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময়ও বহুবার লিখেছি।
সুতরাং আমাদের কক্সবাজার তথা দেশের শান্তি রক্ষার্থে এনজিও গুলোর পদচারনায় কন্ট্রোল আনা উচিত, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পরামর্শের তোয়াক্কা না করে বের করে দেয়া উচিত। ক্যাম্প গুলোর তত্বাবধানে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তাও চাওয়া যেতে পারে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে এখন আর হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। অন্যথায় বাংলাদেশকে এই কারণে চড়া মূল্য দিতে হবে।
ডা.জয়প্রকাশ সরকার (কবি,লেখক ও চিকিৎসক)