প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ও বাঁশিবাদক আবদুল বারী সিদ্দিকীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের আজেকর এই দিনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। লোকজ ও আধ্যাত্মিক গানের জন্যই তিনি সর্বাধিক পরিচিত গানের সাধক ও শিল্পী বারী সিদ্দিকী। বাংলা গানে অসামান্য অবদান সারাজীবনই মগ্ন ছিলেন সংগীত সাধনায়। বাঁশির জাদুকর, দরাজ কণ্ঠের গায়েন, লোকজ ও আধ্যাত্মিক গানে মাতিয়েছেন বারী সিদ্দিকী। লোকগান ও আধ্যাত্মিক ধারার গানের জন্য পরিচিত এই শিল্পী ১৯৯০ এর দশকে কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে সারা দেশের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছান।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনার সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামে আবদুল বারী সিদ্দিকীর জন্ম। পরিবারেই শৈশবে তার গান শেখার হাতেখড়ি।
কিশোর বয়সে নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন বারী। পরে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ বহু গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য পান। সত্তরের দশকে নেত্রকোনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী। পরে ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদি সংগীতের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। এক সময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন।
নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদি সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার বাসায় এক অনুষ্ঠানে বাঁশি শোনাতে যান বারী সিদ্দিকী। সেই অনুষ্ঠানে বারীর বাঁশির চেয়ে তার কণ্ঠে গাওয়া রশিদ উদ্দিন ও উকিল মুন্সির গানই বেশি পছন্দ হয় হুমায়ূনের। পরে লেখকের আগ্রহেই তার কণ্ঠে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়,’ ‘পুবালি বাতাসে’ গানগুলো রেকর্ড করা হয়। টেলিভিশনে ‘রঙের বাড়ই’ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গানটি প্রচার করা হলে বারী সিদ্দিকী পৌঁছে যান সারা দেশের শ্রোতাদের হৃদয়ে।
১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন বারী সিদ্দিকী। রশিদ উদ্দিনের ‘শুয়া চান পাখি’ গানটি সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। ওই বছরই জেনেভায় বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে যোগ দেন বারী সিদ্দিকী। পরে আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকে গেয়েছেন এই শিল্পী। তার ডজনখানেক অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে কারলি গ্রামে বাউল বাড়ি নামের একটি আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন বারী সিদ্দিকী। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অনলাইন নববার্তা-কে জানাতে ই-মেইল করুন- nobobarta@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।